স্বাস্থ্য ডেস্ক : বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামীণ এলাকাতে পিরিয়ড বা ঋতুস্রাবের দিনগুলিতে প্রকাশ্যে বলতে লজ্জা পান তারা। বাংলাদেশের মহিলাদের সচেতন করতে এগিয়ে এসেছেন সেলিমা আক্তার।
হাইলাইটস :
পিরিয়ড বা ঋতুস্রাবের দিনগুলি মহিলাদের জীবনে স্বাভাবিক হলেও এখনও তা প্রকাশ্যে বলতে লজ্জা পান তারা। একই চিত্র বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামীণ এলাকাতেও। ওই বিশেষ দিনগুলিতে তাদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়ার পরেও অধিকাংশ মহিলাই তা ব্যবহার করতে চান না। এখনও পিরিয়ডের সময় ন্যাকড়া বা কাপড়ের টুকরো ব্যবহার করেন তারা। আর সেটি আবারও ব্যবহারের জন্য দূষিত জলে ধুয়ে ফেলেন। আবার, একাংশ আছে আছেন যারা সেই সময়ে ব্যবহার করেন পাটের কাপড়। পরে বালি দিয়ে পরিষ্কার করে নেন। এর ফলে তাদের মধ্যে নানা রোগ বাড়ছে। গোপনাঙ্গের নানা রোগ হলেও লজ্জায় তা গিয়ে বলতে পারছেন না স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে।
তাই তাদের সচেতন করতে এগিয়ে এসেছেন সেলিমা আক্তার। বাংলাদেশের গাইবান্ধার মোল্লারচর ও ফুলছড়ি ইউনিয়নের দরিদ্র মহিলাদের কাছে প্যাড ও স্বাস্থ্যবিধির পণ্য বিক্রি করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই এই কাজ করায় বছর ৪০-এর সেলিমা এলাকায় পরিচিত ‘প্যাড আপা’ নামে। তিনি বলেন, “পিরিয়ড একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এলাকার মহিলাদের কাছে তা অনেকটা ‘নিষিদ্ধ জিনিসের মতন’। সেই সময়ে তারা অনেকেই ন্যাকড়া ব্যবহার করেন। ভালো করে তা শুকাতে দিতেও পারেন না। সেটা আবার ব্যবহার করার ফলে গোপনাঙ্গে জ্বালা হয়। র্যাশ থেকে চুলকানি, জ্বালাপোড়াসহ নানা রোগ হচ্ছে।” বাংলাদেশের অনেক মহিলাই ভুগছেন জরায়ু মুখের ক্যান্সারে। এই কারণেই তা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সেলিমা। একই কথা বাংলাদেশের চিকিৎসকদের।
তাঁদের পরামর্শ, পিরিয়ডের দিনগুলিতে তারা যেন ন্যাকড়ার পরিবর্তে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। কিন্তু, এলাকার অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। তাঁদের কাছে ১০ টাকা দামের প্যাডও বিলাসিতার বস্তু। এখন এই চিত্র বদলাতে চাইছেন সেলিমা। তিনি জানান, এলাকার লোকজন তাঁকে একজন স্বাস্থ্যকর্মী মনে করেন। তাই প্যাড নিয়ে গ্রামের মহিলাদের কাছে গেলে তারা তাঁকে নানা শারীরিক সমস্যার কথা জানান। তিনি তাঁদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করার কথা বলেন। তাঁদের বোঝান, এই প্যাড ব্যবহার করলে সমস্যা অনেকটা কমে যাবে।
বিয়ের পর একটি আঘাত লেগে বাম চোখ নষ্ট হয়ে যায় সেলিমার। এরপর থেকে নিজের পরিবারে বারবার অবজ্ঞার শিকার হন তিনি। ২০১৮ সালে মহিলাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ‘ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ’ গাইবান্ধায় কয়েকজনকে প্রশিক্ষণ দেয়। সেই ট্রেনিং নেন সেলিমাও। তারপর থেকেই এই কাজ শুরু করেন তিনি। প্রথম দিনেই তিনি ১০টি স্যানিটারি প্যাড এবং পিরিয়ডের সময়ে পরিচ্ছন্ন থাকার কিছু সামগ্রী কিনে নেন। প্রথমে অবশ্য গ্রামের মহিলাদের কাছে কোন সাড়া পাননি তিনি। যদিও হাল ছাড়েননি তিনি। এখন গ্রামের অনেকেই তাঁর কাছে প্যাড কিনছেন। এইনিয়ে মানুষকে সচেতন করতে গিয়ে তাঁর নাম হয়ে গিয়েছে ‘প্যাড আপা’।