আগামীকাল সারা দেশের হলগুলোতে মুক্তি পাবে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ছবি গুনিন।
গতকাল বুধবার ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে হয়ে গেল গুণিনের প্রথম প্রিমিয়ার শো।
ছবিটি দেখে কেমন লেগেছে তার একটি রিভিউ আজ পাঠকদের সাথে শেয়ার করবো।
গল্প ও চিত্রনাট্যঃ গ্রামীন পরিবেশের গল্প তুলে ধরার ক্ষেত্রে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের মুন্সিয়ানা সর্বজনস্বীকৃত। জনপ্রিয় ছবি মনপুরার এই নির্মাতা এবারও গ্রামীণ প্রেক্ষাপটকে নিয়েছেন তাঁর ছবির মূল গল্প হিসাব।গুনিন মূলত বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের ছোট গল্প। এই ছোটগল্পকে গিয়াস উদ্দিন সেলিম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের হিসেবে বানানোর ঝুঁকি নিয়েছেন। ছবির প্রিমিয়ারে নিজের বক্তব্যেও নির্মাতা একথা স্বীকার করেছেন ছোটগল্পকে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে বেছে নেয়াটা সত্যিই ভীষণ কঠিন।
ছবির গল্পের সময়কাল ৫০ দশকের আবহমান বাংলার।
গ্রামের এক গুনিন বা ওঝা পরিবারের ছেলে রমিজ(রাজ) এবং সভ্রান্ত মুসলিম মিয়া পরিবারের মেয়ে রাবেয়া(পরিমনী) মধ্যেকার ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়ে গড়ে উঠেছে কন্যার গল্প।সাথে ক্লাইম্যাক্স হিসাবে আছে রমিজের বড় ভাইয়ের একই মেয়ের পাওয়ার আখাংকা।সাথে গুনিন(আবুল কালাম আজাদ) এর তথাকথিত জ্বীন-ভূত এর কেরামতি।সত্যি বলতে ছোট এই গল্পটিকে প্রায় দুই ঘন্টার পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র রূপায়নে ছবির মধ্যে কাহিনীর কিছুটা ধীর গতি পরিলক্ষিত হয়।ছবির চিত্রনাট্য যথেষ্ট শক্তিশালী হওয়ার পরও ছবির কাহিনীর ধীর গতির কারণে দর্শক কিছুটা হলেও ছবির কোথাও কোথাও দর্শক আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে বলে আমার মনে হয়েছে।
সবশেষে বলবো ছবির সমাপ্তি নিয়ে। ছবির সমাপ্তিটা যেন হঠাৎ করে হয়ে যায়। দর্শক হয়তো আরো ডিটেইলসে কিছু জানার আগ্রহ নিয়েই হল ত্যাগ করবে।অনেক দর্শক হয়তো কিছুটা বিভ্রান্ত বোধ করতে পারে।
অভিনয়ঃ একজন বড় নির্মাতার সবচেয়ে ভালো দিক বোধহয় অভিনেতাদের কাছ থেকে তার সেরাটা বের করে আনা।গুণিনের সব চরিত্রের সকল অভিনেতা- অভিনেত্রীর অভিনয় ছিলো মানসম্মত।প্রধান চরিত্রে আবুল কালাম আজাদ, পরিমনী ও রাজের অভিনয় ছিলো অনবদ্য।বিশেষত নতুন হিসাবে রাজের অভিনয় এর প্রশংসা করতেই হবে।এছাড়া অভিনেতা মুস্তাফা মনোয়ার এর কথা বলতেই হবে।পর্দায় অনেকটা অংশ জুড়ে তার অভিনয় উপস্তিতি ছিলো চোখে লেগে থাকার মতো।অভিজ্ঞদের মধ্যে রওশন জামিল,শিল্পি সরকার অপু,ঝুনা চৌধুরী, ইরেশ জাকের যার যার যায়গায় সেরাটাই দিয়েছেন।
সিনেমাটোগ্রাফি, আর্ট ডিরেকশন,এডিটঃ ছবির দৃশ্যধারন ছিলো এক কথায় চমৎকার। গ্রামের পরিবেশ কে এর সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে দর্শক মুগ্ধ হবেই।সাথে ছবির সেট ডিজাইন থেকে শিল্প নির্দেশক ও তার কাজের বাহাবা পেতে বাধ্য।মনে রাখতে হবে ছবিটা ৫০ দশকের কথা বিবেচনায় নির্মিত। সেই সময়ের কথা বিবেচনা করে ছোট বিষয় গুলো ও এড়িয়ে যাওয়া হয়নি।গুনিনের ঘড় নির্মান থেকে গ্রামের সেলুন সব বিষয়ে শিল্প নির্দেশক এর মুন্সিয়ানা টের পাওয়া যাবে।
ছবির এডিটিং ও কালার ভালোই বলতে হবে।
সংগীতঃ এই গুনিন ছবির উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এর গান ও আবওসংগীত।প্রথমে বলি আবওসংগীতের ব্যাপারটা নিয়ে।পুরা সিনেমা জুড়ে একটা গা ছমছমে ভৌতিক আবওসংগীত ব্যাবহার করা হয়েছে।ছবির সাথে এটা কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলো সেটা আলোচনা সাপেক্ষে হলেও ব্যাপাটার মধ্যে একটা ইউনিক ব্যাপার ছিলো।কিছু দর্শকের বেশ ভালো লাগবে, কেউ হয়ত এই মিউজিকের জন্য এই ছবিকে হরর ছবি ভেবে ভুল করে বসতে পারেন।
এবার আসি গানের বিষয়ে।এর আগে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের মনপুরা ছবির প্রতিটি গানই ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল।এই ছবিতে নির্মাতা দুইটি মৌলিক গান ব্যাবহার করেছেন এবং গান গুলো বেশ শ্রুতিমধুর।গান গূলো তে যেন তখনকার আবহমান বাংলাই ফুটে উঠেছে।
নির্দেশনাঃ পরিচালক হিসাবে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের রিভিউ করার কিছু নাই।পুরো ছবিতে তার যত্নের ছাপ দর্শক পাবেন নিঃসন্দেহে। আমার ব্যাক্তিগত ভাবে মনে হয়েছে গল্পের ব্যাপ্তির সীমাবদ্ধতা কি নির্মাতার নির্মানেও কিছুটা প্রভাব ফেলেছে।প্রতিটা ছবির গল্পের ওনঅনুমেয়তা ছবির গল্পের গাধুনিকে শক্ত করে, দর্শক যদি আগে থেকে পরে কি হবে এটা বুঝে ফেলে দর্শক তার আগ্রহ হারাবেই।গুনিন এ কিছু সময় গল্প অনুমেয় ছিলো, দর্শক অনেক সময় আগেই বুঝে ফেলবেন পরে কি হবে।এটাকে নির্মানশৈলির দুর্বলতা না বলে বরং গল্পের সিমাবদ্ধতাই কে দায়ী করা যায়।
সব মিলিয়ে গুনিন একটি শিল্পমানসম্পন্ন ভালো ছবি তবে ছবি দেখে দর্শকের এই আফসোস হয়ত থেকে যাবে শেষ হইয়াও হইলো না শেষ।
গুনিন রিভিউ
গল্প ও চিত্রনাট্য…………………… ১০/৬
অভিনয়……………………………..১০/৮
দৃশ্যধারন ও সম্পাদনা…………….১০/৭
গান ও আবওসংগীত।…………….১০/৭
শিল্প নির্দেশনা……………………….১০/৭
নির্দেশনা……………………………..১০/৭
সর্বমোট………………………………১০/৭
নোটঃ অনেক চেস্টা সত্ত্বেও প্রিমিয়ারের সময় টেকনিক্যাল ক্রু(সিনেমাটোগ্রাফার, এডিটর,মিউজিক ডিরেক্টর,আর্ট ডিরেক্টর এর নাম সংগ্রহের ব্যর্থতার দায় নিজেই স্বীকার করে নিচ্ছি)