কাওসার আহমেদ চৌধুরী আর নেই…(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বিখ্যাত গান “আমায় ডেকোনা,ফেরানো যাবেনা” এর লাইনের মত না ফেরার দেশে পারি জমালেন এই বিখ্যাত গীতিকার।বহুপ্রতিভাধর এই মানুষটি ছিলেন একাধারে জ্যোতিষী, কবি, লেখক, গীতিকার, চিত্রশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা।
অনেকদিন ধরেই ধানমন্ডির একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। আজ রাত পৌনে ১০টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন তার পারিবারিক ঘনিষ্ঠজন এরশাদুল হক টিংকু।কাওসার আহমেদ চৌধুরী কিডনি রোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।তার একমাত্র ছেলে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসি আহমেদ সাফি চৌধুরী বলেন, ‘আব্বার বিভিন্ন অঙ্গ ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে পড়ছিল। তবে কিছুটা চেতনা ছিল।’ তিনি করোনাতেও আক্রান্ত ছিলেন।
কাওসার আহমেদ চৌধুরী ছিলেন একজন বাংলাদেশি জ্যোতিষী ও গীতিকার। তিনি দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় আপনার রাশি নামে রাশিফল গণনার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশের কয়েকটি ব্যান্ড ও সঙ্গীতশিল্পীর জন্য বাংলা আধুনিক গান রচনা করেছেন, তাদের মধ্যে লাভ রান্স ব্লাইন্ড, সামিনা চৌধুরী, লাকী আখান্দ এবং নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী অন্যতম। ।
তার লেখা জনপ্রিয় গানসমূহের মধ্যে রয়েছে,
# এই রুপালি গিটার ফেলে,
# আমায় ডেকো না ফেরানো যাবে না,
# যেখানেই সীমান্ত তোমার সেখানেই বসন্ত আমার,
# কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে রাতের নির্জনে,
# আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে মনে পড়ল,
# মৌসুমি কারে ভালোবাসো তুমি প্রভৃতি।
লেখালেখি তে তার আগ্রহ ছিলো,প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘ভাগ্য জানার উপায়’ বইটি লিখেছেন কাওসার আহমেদ চৌধুরী। এ ছাড়া ‘ঘুম কিনে খাই’ নামে তাঁর একটি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে।
প্রারম্ভিক জীবনঃ
কাওসার ১৯৪৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ এ ভর্তি হলেও পড়া শেষ করেন নাই।১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের অধীনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি গোয়েন্দা হিসেবে তথ্য সংগ্রহের কাজ করেছেন।
কর্মজীবনঃ
কাওসার ১১ বছর বয়সে জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চা শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি গান লেখা শুরু করেন। কর্মজীবনের প্রথমে তিনি সরকারি চাকুরীতে যোগদান করেন। পেশাজীবনে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চাকরি করেছেন।
পরবর্তীতে গান লেখা ও জ্যোতিষশাস্ত্রে মনোনিবেশ করেন। এর পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু টিভি নাটক রচনা এবং পরিচালনা করেছেন।তার নিজের সিনেমা বানানোর ভিষন ইচ্ছে ছিলো।সিনেমা না বানালেও তিনি বেশ কিছু ডকুমেন্টারি নির্মান করেন।
কাওসার আহমেদ চৌধুরীর জানাজা আগামীকাল সকাল নয়টায় ধানমন্ডির ত্বাকওয়া মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবার।