সন্ধ্যা মুখার্জি এর মৃত্যুর ২৪ ঘন্টা না পেরোতেই বাংলার সংগীত আকাশে আবার নক্ষত্রের পতন,সবাই কে কাদিয়ে চলে গেলেন উপমহাদেশের সংগীত জগতের মহারথী বাপ্পী লাহিড়ী। মঙ্গলবার রাতে মুম্বাইয়ের ক্রিটি কেয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।বেশ কিছুদিন ধরেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। গত বছর তিনি করোনা আক্রান্ত হন। যদিও সেই সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি।
স্ত্রীর সাথে বাপ্পী লাহিড়ী, ছবি-ইন্টারনেট
ভারতীয় সিনেমার সংগীত অংগনে তাকে ভাবা হতো নতুন দিনের রুপকার হিসাবে,কোন ভুমিকাতে না ছিলেন তিনি, ছিলেন সংগীত পরিচালক,গায়ক,সুরকার,গীতিকার সব ভুমিকায় আর প্রত্যেক ভূমিকায় ছিলেন একি ভাবে সফল।
বাপ্পী লাহিড়ির শুরুটা হয়েছিলো মাত্র ১৯ বছর বয়সে ১৯৭৩ সালে হিন্দী ভাষায় নির্মিত নানহা শিকারী ছবিতে গীত রচনার মাধ্যমে। এরপর তাহির হুসেনের জখমী (১৯৭৫) চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এতে তিনি গীত রচনাসহ গায়কের দ্বৈত ভূমিকায় অংশ নেন। এর পর রবিকান্ত নাগাইচের সুরক্ষা ছবিতে গান গেয়ে সঙ্গীতকার হিসেবে জনপ্রিয়তা পান।তবে ক্যারিয়ারের মোড় ঘুড়িয়ে দেয় ১৯৮২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত নায়ক মিথুন অভিনীত ডিস্কো ডান্সার ছবিটি।এই ছবিতে বাপ্পী লাহিড়ীর সুর ও সংগীত পরিচালনায় বিজয় বেনেডিক্ট এর গাওয়া টাইটেল গান ডিস্কো ডান্সার শুধু ভারতীয় উপমহাদেশে নয়, রাশিয়া সহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশেও আলোড়ন তুলে।আজ চল্লিস বছর পরও সেই গান এই প্রজন্মের কাছে সমান ভাবে জনপ্রিয়। এই ছবিতে বাপ্পী লাহিড়ীর গাওয়া “ইয়াদ আ রা হ্যা ” গানটি ও দর্শকদের মাঝে আলোড়ন তুলে এবং তাকে ডিসকো গায়ক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে।মুলত ভারতীয় ছবিতে ডিস্কো গানের ধারাটার প্রতিষ্ঠা করেন বাপ্পী লাহিড়ী।ভক্তরা ভালোবেসে ডাকতো ডিস্কো কিং নামে। পুরা ক্যারিয়ার বাপ্পী লাহিড়ী হিন্দি সিনেমার সাথে কাজ করেছেন বাংলা ও দক্ষিণের সিনেমায়।একের পর এক সুপারহিট গান উপহার দিয়েছেন ভারতীয় সংগীতের এই `ডিস্কো কিং’। হিন্দিতে ‘ডিস্কো ডান্সার’, ‘ডান্স ডান্স’, ‘হিম্মতওয়ালা’, ‘চলতে চলতে’, ‘শরাবি’, ‘সত্যমেব জয়তে’, ‘কমান্ডো’, ‘শোলা অউর শবনম’ সিনেমায় তিনি সংগীত পরিচালনা করেছেন।
কলকাতার ‘অমর সঙ্গী’, ‘আশা ও ভালবাসা’, ‘আমার তুমি’, ‘অমর প্রেম’ সিনেমার গানেও সুর দিয়েছেন; গেয়েছেন একাধিক গান। ২০২০ সালে ‘বাগি-৩’ সিনেমার জন্য গাওয়া ‘ভানকাস’ তার শেষ গান।
ছেলের সাথে বাপ্পী লাহিড়ী, ছবিঃইন্টারনেট
১৯৮৫ সালে মুক্তিপাওয়া শরাবি ছবির জন্য জিতে নেন ফিল্ম-ফেয়ার এওয়ার্ড।
বাংলাদেশের চলচিত্রেও রেখে গেছেন তার কাজের ছাপ।নম্বই দশকে নায়ক ফারুক ও প্রয়াত জাফর ইকবাল অভিনীত ব্লক বাস্টার ছবি ‘বন্ধু আমার চলচিত্রে তিনি সংগীত পরিচালক হিসাবে কাজ করেন।বাপ্পী লাহিড়ী ও মুন্না আজিজ এর যৌথভাবে গাওয়া এই ছবির ‘একটাই কথা আছে বাংলাতে’ গান তখন অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো।
১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর জলপাইগুড়িতে বাপ্পি লাহিড়ীর জন্ম।তার আসল নাম ছিলো অলোকেশ লাহিড়ী। বাবা অপরেশ লাহিড়ী ও মা বাঁশরী লাহিড়ী দুজনই ছিলেন গানের জগতের মানুষ। ভারতীয় চলচ্চিত্রের আরেক প্রবাদ প্রতীম গায়ক, অভিনেতা কিশোর কুমার ছিলেন তার দূর সম্পর্কের মামা।
সোনা ভিষন ভালোবসতেন বাপ্পী লাহিড়ী, আর সাথে কালো চসমা।স্বর্নময় পুরা ক্যারিয়ারে পরিধান করেছেন নিজের ট্রেডমার্ক পোষাক, সাথে স্বর্নালংকার সাথে কালো চসমা।তাই সবার ভীড়ে কখনোই তাকে খুজে পেতে কস্ট করতে হতোনা, তার রেখে যাওয়া কাজও সবার কাজের ভীড়ে স্বর্নের মত আলাদা হয়েই থাকবে।