“রাধে শ্যাম(radhe shyam)” গত দুই বছরের প্রবল আলোচিত ভারতীয় সুপারস্টার প্রভাসের নতুন চলচ্চিত্র।গত ১১ ই মার্চ সারাবিশ্বে মুক্তি পেয়েছে এই প্যান-ইন্ডিয়ান সিনেমা। সিনেমার বিষদ রিভিউয়ের আগে ভারতীয় এক জনপ্রিয় গনমাধ্যমের একটা লাইন কোট না করে পারলাম না।এই ছবির বিক্রম আদিত্য (প্রভাস) অন্যের ভাগ্য রেখা পড়ার আগে যদি নিজের সিনেমা ভাগ্য টা পড়তেন আফসোস!! হ্যা ঠিকি ধরেছেন সিনেমায় প্রভাস একজন হস্তরেখাবিশারদ বা পামিস্ট।
গত দুই বছরে এই ছবি নিয়ে এত বেসি ট্রেন্ডিং নিউজ হয়েছে যে এই ছবি ঘিড়ে ছিলো বিশাল হাইপ।এমনিতেই বাহুবলীর মেগা সাফল্যর পর দক্ষিণ এর সুপারস্টার প্রভাস সব সময় আলোচনায়।আর তার উপর এই ছবির যা বাজেট, প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।এত বড় পরিসরের ছবি সাথে মেগাস্টার তারকা হাইপ আর প্রত্যাশার পারদ আকাশ ছোয়াই স্বাভাবিক। তো কেমন ছিলো এই ছবি তাই একটু বিষদে চোখ বুলিয়ে আসা যাক.
কাহিনী ও চিত্রনাট্যঃবলা হয়ে থাকে যে কোন চলচ্চিত্র নির্মানের ক্ষেত্রে” Content is the king”।ভালো সিনেমার জন্য এটা অত্যাবাস্যক।আর এই ছবির সবচেয়ে দূর্বল দিক হচ্ছে এর গল্প।ছবির গল্পে পরিচালক এর মুল বক্তব্য ছিলো হাতের রেখা যাই বলুক না কেন, কর্মই মানুষের ভাগ্য নির্ণয় করে! মোটামুটি এই বক্তব্যই বলতে গিয়ে ‘রাধে শ্যাম’ (Radhe Shyam) ছবিতে ১৪০ মিনিট সময় নিয়ে ফেললেন পরিচালক রাধা কৃষ্ণ কুমার।আগেই বলেছি ছবিতে বিক্রম আদিত্য (প্রভাস) একজন খ্যাতিমান পামিস্ট। যে কিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হাত দেখে এক ভবিষ্যতবানী করে রোশানলে পড়ে সুদূর ইটালিতে নির্বাসিত।তিনি নিজে ভালোবাসায় বিশ্বাস করেন না কারন তার হাতের তালুতে লাভ লাইন নাই।হঠাৎ করেই তার সামনে এসে দাঁড়ায় ডক্টর প্রেরণা ওরফে পূজা হেগড়ে। ব্যস, পূজার রূপে ঘায়েল হয়ে বিক্রমের প্রেম শুরু! পূজার হাতের রেখায় উজ্জ্বল ভবিষ্যত। তা নিজে চোখে ছকে দেখেছেন বিক্রম। কিন্তু কাহানি মে ট্যুইস্ট। কি টুইস্ট?সেটা নায় দর্শক পর্দায় দেখে নিবে।কিন্তু সত্যি বলতে এই টুইস্ট কে মোটেও এই বাজেটের একটা ছবির জন্য শক্তপোক্ত মনে হয়নি।সত্যি বলতে ছবির পরিচালক ছবির গল্প থেকে প্রভাসের স্টারডমের উপরই বেসি ভরসা করেছেন।পরিচালককে দোষ দিয়েও লাভ নাই।কোনও অভিনেতার চরিত্র যদি তাঁর স্টারডমের চেয়ে বড় হয়ে যায়, তবে তা বিড়ম্বনার কারণ। তবে এটা শুধু দক্ষিণী সুপারস্টার প্রভাসের একার সমস্যা নয়। যে প্রযোজকেরা প্রভাসের স্টারডমের উপরে বাজি ধরছেন, তাঁদের মতে ‘লার্জার-দ্যান-লাইফ’ চরিত্রে প্রভাসকে না দেখালে, ছবি চলবে না।আর তাই ছবির গল্পের এই দূর্বলতা পুরো ৩০০ কোটির প্রজেক্টকেই আক্রান্ত করেছে বলেই মনে হবে।
অভিনয়ঃছবিতে সুপারস্টার প্রভাসের অভিনয়কে মানসম্মত বললেও আপ টু দ্য মার্ক বলার সুজোগ নাই।যেকোন কারনেই প্রভাস যেনো এখনো সেই বাহুবলীতেই আটকে আছেন।বাহুবলীর একশন হিরো থেকে রোমান্টিক বিক্রম আদিত্যের ট্রান্সফরমেশনে একটা কমতি দর্শকের চোখে পড়বেই।সিনেমাটি প্যান-ইন্ডিয়ান হওয়ায় মুক্তি পেয়েছে বেশ কয়েকটা আঞ্চলিক ভাষায়।এর হিন্দি ডাবিং এ ভয়েজ দিয়েছেন প্রভাস স্বয়ং নিজেই।আর এই নিয়ে বিস্তর সমালোচনা।সত্যি বলতে হিন্দিতে সুভাসের ডাবিং অনেককেই আশাহত করবে।সিনেমার আরেক কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন পূজা হেগড়ে।দূর্দান্ত ও সাবলীল ছিলো তার পর্দায় উপস্থিতি। গল্পের দূর্বলতা বা মন্থরতা অনেকটাই আড়াল হয়েছে পূজার উপস্থিতিতে।প্রায় তিন দশক পর মেনে পিয়ার কিয়ার নায়িকা ভাগ্যশ্রী এর পর্দায় উপস্থিতি চমক হিসাবেই থাকবে।
সিনেমাটোগ্রাফি ও এডিটঃএই টেকনিক্যাল দিকটি এই ছবির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক বলতেই হবে।সিনেমাটোগ্রাফার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন মনোজ পরমহংশ।এ বছরের আরেক বিগ বাজেট মুভি বিস্ট এর সিনেমাটোগ্রাফার এই মনোজ।সত্যি বলতে অসাধারণ কাজ করেছেন এই ছবিতে।অসাধারণ সব লোকেশনের অসাধারণ পর্দায় উপস্থাপন।দর্শক প্রতিটা দৃশ্য দেখলেই বুঝতে পারবে কেন এত খরচ করে এই সিনেমা।
এই সিনেমার সবচেয়ে আলোচিত দিক বোধহয় এর এডিট ও ভিএফক্স।ভেংকটেস রাও এর সম্পাদনায় ভিএফএক্স এর দায়িত্ব পেয়েছিলেন কামাল কান্নান।পরিচালকের ভাষ্যমতে পৃথিবীর ১২ টি দেশের ভিএফক্স স্টুডিওতে হয়েছে রাধে শ্যাম এর ভিএফএক্স এর কাজ। আর তার প্রমান পর্দায় মিলবে।ভারতীয় ছবিতে এই মানের ভিএফক্স সত্যিই বিরলতম।
সেট ও শিল্প নির্দেশনাঃ ইউরোপের সুন্দর সব লোকেশনে চিত্রায়িত হয়েছে এই সিনেমা, আর ৭০-৮০ দশকের কাহিনী বর্ননার জন্য ব্যবহার হয়েছে ওই সময়ের বিবেচনায় সেট।শিল্প নির্দেশক তার কাজের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।সিনেমার শেষের অংশে জাহাজের উপস্তিতি মনোগ্রাহী ছিলো।
সংগীতঃ ছবির আবহ সংগীত মোটামুটি মানের ভালো ছিলো।এস থামান এর করা স্কোরটা প্রশংসার দাবি রাখে।এই ছবির গান গুলো ছিলো ভীশন রোমান্টিক,যা ভালোবাসার ছবির সাথে মানানসই।তেলেগু ভাষায় গানের দায়িত্বে ছিলেন জাস্টিন প্রভাকরন আর হিন্দি ভার্শনে ছিলেন মিথুন ও আমাল মালিক।হিন্দি ভার্শনে অরজিত ও মিথুনের গাওয়া আশিকী আ গিয়া এবং আমান মালিকের গাওয়া জান হাই মেরি গান দুটি দর্শকদের বেস ভালো লাগবে।তেলেগু ভার্শনে অনুরাগ ও শ্রেয়া ঘোসালের গাওয়া নিন্নেলে গানটা ও বেশ শ্রুতিমধুর।
নির্দেশনাঃছবির নির্মান নিয়ে আসলে প্রশ্ন তোলার সুজোগ কম।পরিচালক রাধা কৃষ্ণ কুমার এত বড় একটা প্রজেক্ট সামলেছেন ঠিকঠাক গোছালো ভাবেই।প্রশ্ন থেকে যায় আসলে ৩০০ কোটির একটা প্রজেক্টের জন্য তার নিজের যে স্টোরি নির্বাচন করেছেন তার সাফল্য নিয়ে।সুপারস্টার প্রভাসের প্রতি দর্শকদের যে প্রত্যাশা তা কি এই সিনেমা আদো পূরন করতে পারবে।
সত্যি বলতে কোন কিছু না জেনে না ভেবে কেউ যদি এই ছবি দেখে তবে এই ছবিকে একটা গতানুগতিক রোমান্টিক ছবি হিসাবে পাশ মার্ক দিয়ে দিবেন,কিন্তু এত এত হাইপ আর প্রত্যাশা নিয়ে দেখলে বলতে বাধ্য হবে “যত গর্জে তত বর্ষে না।
পূর্নাং রেটিং……
কাহিনী ও চিত্রনাট্য………………… ১০/৫
অভিনয়………………………………..১০/৬
চিত্রায়ন,সম্পাদনা+ভিএফক্স……….১০/৮
শিল্প নির্দেশনা ও সেট(লোকেশন)….১০/৮
সংগীত…………………………………..১০/৭
নির্দেশনা……………………………….. ১০/৭
সর্বমোট………………………………….১০/৭
আইএমডিবি(IMDB) রেটিং………….১০/৭.২