মনিরা সুলতানা পাপড়িঃ এ মাসের ১১ তারিখে ওটিটি প্লার্টফর্ম অ্যামাজান প্রাইমে মুক্তি পেয়েছে বহুল প্রত্যাশিত ছবি গেহরাইয়ান(Gehraiyaan)
রাইয়ান “Gehraiyaan” মুভিটা দেখার আগেই সবচেয়ে বেশি যে শব্দটা শুনেছি এই মুভি সম্পর্কে, তা হোলো “পরকীয়া।” কি জানি, দেখার ভিন্নতা থাকতে পারে। কারণ আমি তো কতগুলো অসহায় মানুষকে দেখলাম যারা একটা ঢেউয়ের চক্রে বারবার নিজের অতীতের সামনে আছড়ে পড়ছে। রোলিং ওয়েভ।অনেক সমালোচক ছবিটাকে ২০০৫ এ মুক্তি প্রাপ্ত উডি অ্যালেনের মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার ছবি “ম্যাচ পয়েন্ট এর সাথে সাদৃশ্য খুজে পেয়েছেন।পরিচালক শকুন বার্তা নিজেই ছিলেন গল্পের দায়িত্বে। গতানুগতিক হিন্দি ছবির গল্পের সাথে তুলনা করলে বলতেই হবে পরিচালক এই গল্প নির্বাচনে যথেষ্ট ঝুকি নিয়েছেন।
দীপিকা তার মায়ের আত্নহত্যা আর বাবার আত্নকেন্দ্রীকতার ঢেউয়ের পাকে বারবার আছড়ে পড়েই মোটামুটি টেনে নিয়ে যায় তথাকথিত একটা লিভ-ইন সম্পর্ক(ধৈর্য কারওয়া) যা তাকে কিছুটা ছুঁয়েছে তা হোলো তার কাজিন(অনন্যা পান্ডে) এর ফিয়ন্সে,সিদ্ধান্ত। কিন্তু কেন ছুঁয়েছে?
কারণ সিদ্ধার্থ ও একটা ব্রোকেন এবং ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এর শিকার বাচ্চা যে তার অতীতের ঢেউ থেকে বেরুতে পারেনা। বাবাকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার মতো ম্যাচুরিটি যে ছেলের আছে, ঘর থেকে পালিয়ে আসার মতো পলাতক মন ও আছে তার।এই দুই স্বত্তার মাঝখানে লড়তে দেখা যায় তাকে সম্পর্কের ঢেউয়ের পাকে। নিজেকে এস্টাব্লিশ করার জন্য ধনী গার্লফ্রেন্ডের সাহাজ্য নেয়া এবং তার কন্ট্রোলিং বাবা-মায়ের মিষ্টি কথার থাপ্পড় মেনে হলেও ধনী হবার ইচ্ছে বনাম গভীর চোখের দীপিকা মানে তার গার্ল ফ্রেন্ড এর কাজিনের প্রেমে পড়ে যাওয়া। তাকে এটেন্ড করা, তাকে অনেস্টলি পেতে চাওয়া এবং সেজন্য তার গার্লফ্রেন্ড এর কাছ থেকে নেয়া লোন শোধ করে দেয়ার ইচ্ছে, এগুলো তার ব্যক্তিত্বের সাদা দিক। আবার একই সাথে এক্সট্রিম প্রেশারে পালিয়ে যাবার প্রবণতা,যেমন সিচুয়েশন হ্যান্ডল করার জন্য
গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে ভ্যাকেশনে গিয়ে তাকে বাড়ী মর্টগেজ এ রাজী করানোর ইচ্ছে বা দীপিকার বেইবী নষ্ট করার চেষ্টা বলে দেয় তার চরিত্রের আত্বসমর্পনের কালো দিক গুলো।স্ট্রেসড হলে সেও ভায়োলেন্ট হয়, অথচ তার বাবাও ভায়োলেন্ট ছিলো, সে ঘৃণা করতো তাকে। তার মানে মানুষ যা ঘৃণা করে অন্যের ভেতরে,কখন যে নিজেই সেই আচরণ গুলো নিজের মধ্যে এডপ্ট করে তা সে নিজেই জানেনা।
এবং একই কারণে মানুষের অতীত তার পিছু ছাড়েনা, ঢেউ যেমন তীরে আছড়ে পড়ে বারবার,মানুষের অতীত ও এভাবেই সামনে এসে আছড়ে পড়ে বারবার।
পুরো মুভিটাতে কয়েকজন মানুষকে তার নিজের কষ্টকর অতীত কে ভোলার চেষ্টায় আবার সেই অতীতে আছড়ে পড়তেই দেখা যায়। একটা বিশাল ঢেউ এর তীরে আছড়ে পড়ার মতো।
দীপিকার খুব ন্যাচারাল ফ্লড স্কিন দেখে ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে আরবান লাইফে নিজেকে সোজা রাখার চেষ্টায় লড়তে থাকা মেয়েদের স্কিন এমনই হয়। রোজি রোজি ব্লাশড অন হয় না।
প্রধান চরিত্রে দিপীকা ও সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী এর অভিনয় ও তাদের পর্দার ক্যামেস্ট্রি যথেষ্ট ভালোই ছিলো যদিও কিছু প্রাপ্তবয়স্ক দৃশ্যে ব্যাপারটা কিছুটা অতিরঞ্জন মনে হবে।অন্যান্য চরিত্রে অনন্যা পান্ডে,ধৈর্য কারওয়া,
নাসিরুদ্দিন শাহ,রজত কাপুর সবাই মানসম্মত অভিনয় করেছেন।
ছবির টেকনিকাল দিক বলতে গেলে এর কৌশল শাহ এর করা সিনেমাটোগ্রাফি ভালো ছিলো,নীতেশ ভাটিয়ার সম্পাদনা ঠিকঠাক ছিলো।ছবির সংগীতের দায়িত্ব ছিলো কবির কাঠপালিয়া ও সাবেরা মেহতার উপর।ছবির গান ও আবও সংগীত বেশ ভালোই বলতে হবে।ছবির লোকেশন, সেট ডিজাইন ও শিল্প নির্দেশনা আকর্ষণীয় বলতেই হবে।আর সব শেষে পরিচালক শকুন বার্তার পারফরম্যান্স।তার আগের দর্শকপ্রিয় ও ব্যবসাসফল ছবি “কাপুর এন্ড সন্স” এর মুক্তির ছয় বছর পর দর্শকদের তিনি উপহার দিলেন এই “গেহরাইয়ান”।ছবিটির প্রত্যেকটা কারিগরি বিষয়ে নির্দেশকের যথেষ্ট যত্ন ও সমন্বয়ের ছাপ থাকলেও ২ঘন্টা ২৮ মিনিটের এই ছবি দর্শকদের কিছু সময় একঘেয়ে এবং ক্লান্তিকর হয়ে উঠতে পারে। সামগ্রিকভাবে, ছবিটিতে কিছু সুন্দর দীর্ঘস্থায়ী মুহূর্ত রয়েছে। আপনি যদি স্বাভাবিকের বাইরে দেখতে চান, গেহরাইয়ানের অবশ্যই গভীরতা রয়েছে যা অন্বেষণ করার যোগ্য।তবে মুভির নাম টা কেন যেন আমার কাছে রেলেভেন্ট লাগেনি। গভীরতার চেয়ে বহমানতা বা জীবন কে ” লেট ইট গো” হতে দেয়ার ছবিই বেশি ফুটে উঠছে।
জীবন তো “লেট ইট গো” এর ই আরেক নাম।
কাহিনী – ১০/৬
সংলাপ -১০/৭
অভিনয় -১০/৭
সিনেমাটোগ্রাফি -১০/৭
লোকেশন ও সেট -১০/৮
সংগীত ও আবহ সংগীত- -১০/৮
সম্পাদনা -১০/৬
নির্দেশনা -১০/৭
সর্বমোট -১০/৭
IMDB রেটিং -১০/৬.৩